চুপচাপ, নিরীহ মেয়েটার সুযোগ নিতে আসতেন অনেক পুরুষই। সকলকে চমকে দিয়ে এক দিন আসল রূপটি বার করলেন তিনি। ফাঁকা রাস্তায় একা মহিলার সুযোগ নিতে আসা পুরুষের মর্মান্তিক পরিণতি করলেন। না। এর পর আর নিরীহ মুখের আড়ালে থাকার প্রয়োজন হয়নি। বরং চিত্রনাট্য যত এগিয়েছে তত আত্মবিশ্বাস ধরা পড়েছে তাঁর চোখেমুখে। স্বত্ত্বার লড়াইয়ে জীবন বাজি রাখতেও পিছপা হননি। তিনি ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর রাজি।

পর্দার বাইরে যিনি সামান্থা আক্কিনেনি। এই ওয়েব সিরিজের মতো বাস্তব জীবনেও লড়াই করেই এগিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। কখনও পরিবারের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছেন আত্মপরিচয়ের জন্য। কখনও প্রেমিকের আচরণ তাঁকে লড়াকু করে তুলেছে। কখনও আবার নারীদের অসম্মান মেনে নিতে না পেরে প্রতিবাদ করেছেন নির্ভয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামান্থা ছোট থেকেই ছিলেন উচ্চাকাঙ্খী।

যে কাজেই হাত দিতেন তাতেই নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দিতেন। তাই পরীক্ষাতেও একাধিক বিষয়ে একশোয় একশো নম্বর আনা ছিল তাঁর কাছে নস্যি। এই সামান্থা যখন বড় হলেন, স্কুলের গণ্ডি পেরনোর সময় এল, বাড়ির সকলেই ভেবেছিলেন পরিবারে এ বার একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবেই। পরিবারের সকলকে চমকে দিয়ে সামান্থা নৌকা ভাসিয়ে দিলেন স্রোতের প্রতিকূলে।

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার তো দূর অস্ত্, পড়াশোনার একেবারে ভিন্ন মেরুতে পা দিলেন তিনি। মডেলিং করতে শুরু করলেন। লক্ষ্য ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। সামান্থার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি পরিবার। একটা সময় সামান্থার কানের কাছে অনর্গল বিনোদন জগতের নেতিবাচক দিক তুলে ধরতেই ব্যস্ত থাকতেন মা-বাবা।

তাঁরা ভেবেছিলেন এ ভাবে মেয়ের মাথা থেকে অভিনয়ের ভূত নামাতে পারবেন। পারেননি। বরং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সামান্থা দক্ষিণী ছবির প্রথম সারির নায়িকা হয়ে উঠলেন। ১৯৮৭ সালে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে জন্ম নেওয়া সামান্থার মা মালয়ালি, বাবা তেলুগু। সামান্থা নিজেকে তামিল হিসাবে পরিচয় দেন। ৩৪ বছরের এই অভিনেত্রীর অভিনয় শুরু ২০১০ সালে গৌতম মেননের একটি তেলুগু ছবিতে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর যথেষ্ট প্রশংসা কুড়োন সামান্থা।

তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে খুব নামডাক হয় তাঁর। নামজাদা পরিচালকেরা তাঁকে প্রস্তাব দিতে থাকেন। অন্য দিকে তামিল ছবিতে তখন তাঁর খরা চলছিল। যাও বা সুযোগ পাচ্ছিলেন সেই ছবিগুলি হয় বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ছিল, নয় ছবির শ্যুটিংই বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একটা সময় তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে সামান্থাকে ‘অভিশপ্ত’ হিসাবে দেগে দেওয়া হয়। তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বড় ব্যানারে ছবির প্রস্তাব পান তিনি।

কিন্তু ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল যে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। হঠাৎ করেই তাঁর শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। ৩ মাস শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। লড়াকু সামান্থা হাল ছাড়েননি। সুস্থ হয়ে ফের কাজ শুরু করেন। তেলুগু এবং তামিল ছবিতে অভিনয় করতে শুরু করেন। কিন্তু সমালোচকরা তাঁর পিছু না ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করে বসেছিলেন বোধ হয়। তাই সব সময়ই তাঁর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে সমালোচনা শুরু করে দিতেন। ইন্ডাস্ট্রিতে নাকি তাঁর থাকা-না থাকা সমান, এমনও শুনতে হয়েছে তাঁকে।

একটা সময় সামান্থা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেবেন ভেবে নিয়েছিলেন। ঠিক তখনই লড়াকু সামান্থা যেন তাঁকে হার না মানতে বলেন। সমালোচকদের কথায় ভেঙে না পড়ে তাঁদের জবাব দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিতে থাকেন। সামান্থা খুব বেছে ছবি করতে শুরু করেন। ২০১৪ সালের পর থেকেই যে কারণে তাঁর কেরিয়ারের রেখাচিত্র উঠতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তাঁর অভিনয় নিয়ে সমালোচনাও বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যক্তিগত জীবনেও ঘা খেয়েছেন। প্রথম ভালবাসার মানুষ দক্ষিণী সুপারস্টার সিদ্ধার্থের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। কী কারণে তাঁদের বিচ্ছেদ হয় তা আজও গোপনই রেখেছেন সামান্থা। ২০১৭ সালে নাগার্জুনের ছেলে নাগা চৈতন্যকে বিয়ে করেন সামান্থা। ২০১০-এ ‘ইয়ে মায়া চেসাভে’-ছবির সেটে প্রথম দেখা হয় সামান্থা ও নাগার। তার পর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর রাজি কম কথার মানুষ। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। বাস্তবের রাজি কিন্তু মোটেই কম কথার মানুষ নন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। সুত্র-আনন্দবাজার পত্রিকা